(আমার বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. হুমায়ূন কবিরকে নিয়ে আমার নিজস্ব গালগল্প।)
আমাদের চেয়ারম্যান স্যারকে আজকাল আমার খুব ভাল্লাগতেছে। ভেরি মাচ ইন্টারেস্টিং। যদিও স্যারকে শুরুর দিকে আমার বেশ বোরিং মনে হইতো। স্যার কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের মানুষ। উনার কথাবার্তা, ক্লাসরুমে লেকচার দেয়া, ড্রেসআপ, চলাফেরা কিংবা ডিপার্টমেন্টে আসা যাওয়ার মধ্যে ব্রিটিশদের কোন আধিপত্য নাই। খুবই সহজ, স্বাভাবিক এবং চমৎকার রকম সাধারণ মানুষ। এমন মানুষ বোরিং হইলেও আমার অতি পছন্দের।
স্কুল কলেজের হেডমাস্টার বা প্রিন্সিপালদের মতো বিভাগীয় চেয়ারম্যান ঘরানার মানুষরা খুব একটা ইন্টারেস্টিং হন না বোধ হয়। কোন এক অদ্ভুত কারণে নিজের চারপাশে একটা আলাদা দেয়াল তুলে রাখেন। উনাদের কাছে যাইতে গেলে নানান রকম কনভেনশন মাইনা তারপর যাইতে হয়, আলাপ করতে নানান হিশেব নিকেশ মিলাইয়া তারপর দুইটা কথা কইতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের চেয়ারম্যান স্যার অনেকখানি ভিন্ন যারে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ বলতে পারি। প্রথম দেখায় ডিপার্টমেন্টে এসে স্যারকে চেয়ারম্যান হিশেবে আবিষ্কার করা কঠিন। খোলসা করি – যারা প্রথম প্রথম বিভাগে আসা যাওয়া শুরু করে সেসময়গুলোতে ডিপার্টমেন্টে একজন মোটামুটি রকম বয়স্ক ভদ্রলোককে প্রায়ই নানান যন্ত্রপাতি কিংবা কেবল নিয়া গুতাগুতি করতে দেখে, বিশেষ করে করিডরের মাঝ বরারবর একটা বাকসোর কেবল নিয়া নাড়াছাড়া করতে বেশী দেখা যায়। নতুনরা একদুবার তাকায় তারপর ক্লাসরুমের দিকে হাইটা যায়। দুচারদিন পর ওই বয়স্ক ভদ্রলোক ফিজিক্স ক্লাস নিতে ক্লাসে আসেন এবং পরিচয় হিশেবে আমরা জানি যে উনি আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান। এরপর ব্যাপারটা মোটামুটি নিয়মিত যে – ডিপার্টমেন্টের নানান জায়গার সুইচবাকশো কিংবা LAN কানেকশন নিয়ে স্যার কিছু একটা করছেন।
একদিন ক্লাসে স্যার কাঠকোট্টা কিছু একটা পড়াচ্ছিলেন। যতদূর মনে পড়ে সেমিকন্ডাক্টরের কিছু একটা। তো, স্যারের ক্লাসে সেদিন দুয়েকজন খুব পেইন দিচ্ছিলো। ঠিক বিরক্তি করা নয়, ওরা ওদের মতুন করে ক্লাসের মধ্যে নিজেরা কথা বলছিলো। স্যার এ ব্যাপারটা খেয়াল করলেন এবং ওদের একজনকে দাঁড় করিয়ে আচ্ছামত দিলেন ঝাড়া। এরপর ক্লাস নিতে শুরু করলেন আবার। হুট করে স্যার ক্লাস নেয়া থামিয়ে রুমের ঠিক মাঝ বরাবর স্থির হয়ে দাঁড়ালেন এবং এমনভাবে কথা বলতে শুরু করলেন যে একটু আগে তিনি যে বকাঝকা করেছেন তার জন্য উনি খুবই দুঃখিত! স্যার আমার ওই ক্লাসমেট বন্ধুটিকে বারবার বলতে লাগলেন মন খারাপ করোনা, বাবা। আমি তোমাদের কখনোই বকা দিতে চাই না। তোমরা ক্লাসে এতো বিরক্ত করো ক্যান, হু?
স্যারের সাথে আমার মেশামেশি করার সুযোগটা একটু বেশীই বলা যায়। তাই গল্পও বেশী! গতবছর আমাদের ক্যাম্পাসে ন্যাশনাল হাই স্কুল প্রোগ্রামিং কন্টেস্টে কাজ করছিলাম। তো, ঢাকার আয়োজকরা প্রিন্টেড প্রশ্ন পাঠাননি আমাদের জন্য। পরদিনই কন্টেস্ট। তো স্যারকে আমি জানালাম যে, স্যার প্রশ্ন তো পাঠায় নি ওরা। ডক পাঠিয়েছে, এতোগুলো প্রশ্ন প্রিন্ট করবো কোথায়! সময়ও তো নেই তেমন। স্যার কিছুক্ষণ ভেবে আমার কাছ থেকে প্রশ্নগুলো নিলেন এবং প্রশাসনিক ভবনের দিকে রওনা দিলেন। আমি স্যারের পিছু পিছু গিয়ে দেখলাম, স্যার ভিসি স্যারের অফি রুমের লাগোয়া একটা রুমে প্রশ্ন প্রিন্ট করতে শুরু করেছেন। ওখানকার প্রিন্টারটা বেশ দামি এবং খুব দ্রুত কাজ করে। এই প্রিন্টার এডমিশনের সময় ইউজ করা হয় এবং সাধারণত যেকেউ ইউজ করতে পারে না। স্যার আমার সাথে প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে এবং উনাদের গ্রামের বাড়িতে এমন প্রিন্টার ছিলো এসব গল্প করতে লাগলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরকম পুরানো ধাঁচের একটা প্রিন্টারে উনার বাবারা হ্যান্ডবিল ছাপাতেন বলে জানলাম। সেদিন, স্যার নিজে বসে বসে প্রত্যেকটা প্রশ্ন প্রিন্ট করলেন। কথাবার্তা প্রায় আধা ঘন্টার মত সময় আমি সেদিন স্যারের সাথে কাটিয়েছিলাম।