আজকে ০৯ জুন। একবাকশো নস্টালজিয়া ডুবানো তারিখ। আজ থেইকা বছর ১ আগে আজকের দিনে ক্যাম্পাস থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা ঠিক করনের লাইগা আন্দোলন হইছিলো। ব্যানার-ফেস্টুন, বাসভর্তি ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিল, মাইকে চড়াও স্লোগান, শতশত শিক্ষার্থীর চিৎকার, সোনাপুর-জিরো পয়েন্ট সড়ক অবরোধ, পানির বোতল হাতে ছুটাছুটি, প্রচন্ড রোদ আর ক্ষণিক বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিরতিহীন সড়ক অবরোধ, প্রশাসনের আশ্বাস, নেগোশিয়েশন, আন্দোলনকারীদের সাফল্যের উচ্ছ্বাস। ০৯ জুন, ২০১৪। ক্যাম্পাসে আমার প্রথম পথের লড়াই।
আমরা তখন মাত্র ক্যাম্পাসে আসছি। একদম জুনিওর ব্যাচের স্টুডেন্ট। অল্প ক’দিন হলো ক্যাম্পাসে পথ ঘাট চিনতে শিখেছি। সে সময়ে রাস্তার আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি শুরু হয় অনলাইনে। ওই সময়টাতে রাস্তার অবস্থা সত্যিই বাজে ছিলো। ভাঙাচোরা অবস্থা, বাসে চড়লে এই মনে হয় বাস খাদে পড়ে গেলো – সবচে মজার ব্যাপার মনে আছে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় মাছ ছেড়ে দিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। সেসময়ে সোহাগ ভাইর মাছ হাতে একটা ছবি ভাইরাল হইছিলো। অনলাইনে লেখালেখির সূত্রতা ধরে অনিক দা’র সাথে যোগাযোগ হয়। অনিক দা, সোহাগ ভাইসহ অনেককেই দেখছিলাম বিভাগে বিভাগে গিয়ে সবাইকে আন্দোলনের জন্য মোটিভেট করছিলেন। এর দুয়েকদিনের মাঝে দাদা ব্যানার লেখার জন্য পোলাপান খুঁজে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। আমি রেসপন্স করলাম, সেখান থেকে সাক্ষাৎ, মার্কার-কাগজ কিনে রাতভর পোস্টার লেখালেখি। ঘটনাবহুল ফকিরপুরের মেসে রাকিব ভাই, মারুফ ভাই, ফারিয়ান ভাই, সাজ্জাদসহ আরো কয়েকজন ছিলামা আমরা।
সকালে বিশাল জমায়েত। ধীরে ধীরে সবাই জড়ো হয়ে সোনাপুর অবরোধ। এটা নোবিপ্রবি’র গণআন্দোলন ছিলো – যিনি যাই পেরেছেন সে জায়গা থেকে কাজ করেছেন। কেউ স্লোগান দিচ্ছিলো, হাততালিতে মুখরিত সোনাপুর এলাকা; পানির যোগান দিচ্ছিলো কেউ কেউ, সেদিন সোনাপুর এলাকার মানুষ আমাদের সাথে একাত্মতা জানিয়েছিলেন – বিভিন্ন দোকান থেকে বোতল বোতল পানি ফ্রি দেয়া হইছিলো, আন্দোলনে কয়েকজন শিক্ষকও যোগ দিয়েছিলেন। তুমুল স্লোগান-চিৎকার আর রোড ব্লকিং পরিস্থিতিতে প্রশাসনের আশ্বাস এবং আন্দোলনকারীরা ঘরে ফিরে গেলেন।
আমার সময়ে এটাই সবচে বড় আন্দোলন। আমি ইচ্মছাত ছুটাছুটি করছি সেদিন। পানি সরবরাহ করছি, স্টুডেন্টদের বসার জন্য পত্রিকা মেনেজ করছি। আরো কি কি করছি মনে নাই। নতুন ক্যাম্পাসে আসছি, সে সময়ে রাস্তার আন্দোলন আমাদের শিরায় শিরায় অন্য আলোড়ন যুগিয়েছিলো। দুবছর পার হয়ে গেলো। মাঝখানে অনেক গল্প- অনেক কথা।