(সাম্প্রতিক রামপাল ইস্যুতে বেশ কয়েকজ ফেসবুকার সংবিধানের একটি ধারা দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় নাগরিক অধিকার দাবি করছেন। সে প্রেক্ষিতে হ-য-ব-র-ল লেখা।)
আমার (আলোচনার প্রেক্ষিতে কিংবা সমাধান খুঁজতে গিয়ে) সবসময়ই মনে হয়েছে সমস্যাটা আমাদের ঠিকঠাক পড়াশুনায় কিংবা চিন্তাভাবনার রেখায়। সংবিধায় ৭(ক) ছাড়াও যে ১১ বিভাগে বহু বহু ধারা আছে, সেগুলো ৯০ ভাগের অধিক মানুষের কখনো পড়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা বঙ্গবন্ধুর চেতনার কথাবার্তা- দীর্ঘকালের চর্বিত চর্বন মুক্তিযুদ্ধের গল্প ইতিহাস, ৭ ই মার্চ, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, আওয়ামী রাজনীতির ইতিহাস আর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আইসা থাইমা যায় আমাদের ইতিহাসআলাপ। সবার না কিন্তু বিশাল সংখ্যায় এমনই। নইলে গতকালের জামাত নেতা আইজ আওয়ামীলীগের সাংসদ হয় হয় কি কইরা?
না পড়ে, ঘটনার ভেতরটা না দেখে- কেন হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, কার জন্যে হচ্ছে, কারা করছে, কিভাবে করছে, কোথায় করছে, কেন একদল মানুষ বিরোধিতা করছে, কেন লংমার্চ, কেন লাঠিপেটা, কেনইবা শাহবাগ – এসব না দেখে সকালে এক কথা, বিকাল বেলায় আরেক কথা।
একখান ধর্মগ্রন্থ, ধর্ম সহায়ক আরো দুচাইরটা কাগজ, ১৪ ক্লাসের টেক্সট আর দুয়েকটা প্রেম-বিরহ কিংবা মিডল ক্লাস লাইফ লইরা উপন্যাস পড়ন, কিছুটা মোটিভেশনাল লেখাজোকা, ভারতদেশের সিনেমা, ভারতীয় বাংলার জিগজ্যাগ গান, কাসেম বিন আবুবকর, কিশোর কন্ঠ, নিজস্ব চিন্তা সম্প্রদায়ের খবরে কাগজ, ফেসবুক, ফেসবুকের নিজ চিন্তাভাবনার পোলাপাইনগোরে নিয়া বানানো দেয়ালের স্ট্যাটাস কিংবা উঠতি বুদ্ধিজীবীদের সমাজচিন্তা পড়াপড়ি দিয়া জীবন ও সমাজকে বিবেচনা করার সামর্থ্য ঠিক কতখানি হয়? কতখানি চিন্তা করার জায়গা তইরি হয়? আজ থেকে ১০ বছর আগেকার বাংলাদেশরে ঠিক কতটা দেখা যায়। বই পড়তেই হবে তা নয় যা কইতেছেন ভাইবা চিন্তা কইলেই কিন্তু ঝামেলা অনেকখানি চুকে যায়। তবে বই হল শক্তি। আপনার পেছনের হাজার বছরের আখ্যান জানার উপায় হলো বই।
একজন রিকশাশ্রমিক- যার ঘরে বিদ্যুৎ নাই, যার দুবেলা খাওনের জোগাড় নাই নিয়ম কইরা- তার জন্য রামপাল না সুন্দরবন(?) এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই রামপাল। কারণ আমরা গরিব দেশের লোক। এইখানে ডেমোক্রেসি টাকার হিশেবে নির্ধারিত হয় কারণ চাইলেই টাকা দিয়া ভোট কেনন যায় বাজার থিকা।
সমস্যাটা এইখানে। রামপালের পক্ষে বহু মানুষ পাওন যাবে। সুন্দরবনের পক্ষে কিছু নিরেট লোক থাকবে; বাকি লোকেরা থাকবে দোদুল্যমান অবস্থায়। কিছু মানুষ যারা সত্যটারে খুঁজতে চান- এরা ছাড়া; হিশেবের বিশাল সংখ্যার লোক দুলবে হুজুগের ঠেলায়। আজ এখানে কাল ওখানে। এইযে দীর্ঘদিন ধরে রামপাল বিরোধিতা সরকার কিন্তু চুপ মাইরা বইসা আছে- এইযে তনু হত্যা নিয়ে বিশাল আন্দোলন- দ্য গভর্নমেন্ট ডোন্ট কেয়ারড কজ দে ডোন্ট হ্যাভ টাইম টু ফাক ইউ।
সংকট নিয়া যারা কথা বলেন তারা ডাকসুতে বইসা বইসা এমন কঠিনভাবে কথাগুলো বলেন যে সাধারণ মানুষের জন্য লড়াইকারীদের ভাষা সাধারণ মানুষ খুব একটা ঠাউর করতে পারে না। যারা বুঝতে পারছে – তারা বিষন্নতায় ভুগছে; এই বিষন্নতায় ভোগা মানুষের দল না বাড়লে কখনোই কিচ্ছু হইতো না বইলা আমার মনে হয়। বুঝন চাই এই সুন্দরবনটা আমার, আপনার। রামপালের বিরোধিতা করলে সরকারের বিরোধিতা হয়- হোক। চেতনার প্রশ্ন রাইখেন না; চেতনা নিয়ে সকাল দুপুর এক আধটু ব্যবসা হয়- এটা মাইন নিতে হবে। ৬৫% মানুষের ন্যুনতম বুঝার জায়গা যখন তইরি হবে প্রত্যেকটা মানুষ যখন নিজের পায়ের তলার মাটিটা খুইজা নিতে চাইবে – তখন মুক্তি আসবে- আসতে হবে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চাকরি নয় শিক্ষকতা করেন, যখন ছাত্ররা সব ভাঙচুর করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে- তখন পরিবর্তনটা আসবে। আর যাই হোক- প্রত্যেকটা ইনডিভিজুয়াল তার অবস্থান পরিষ্কার কইরা লক আগে, যুক্তি কাগজ কলম হিশেব কইরা ঠিকঠাক করুক সে কোথায় যাবে; তারপর শান্তির আসা করা যায়।
নাগরিক মানুষ যদি মনে করেন রাষ্ট্র যা করছে তা অন্যায় করছে, অবিচার করছে, জনবিরোধী কাজ করছে – রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ হলে নাগরিক মানুষের নিজেদেরই ক্ষতি হবে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে আইনের দোহাই লাগে না, সঠিক চৈতন্যবোধ থাকলে সংবিধানের ধারা বা আইন দিয়ে তারে এমন একটি প্রাণপ্রকৃতির লড়াইকে জাস্টিফাই করার প্রয়োজন হয় না। আইনের ধারাই যদি লড়াই সংগ্রামের জাস্টিফিকেশন দিতো তাইলে ‘৫২ আসতো না। ১৪৪ ধারার ঘোষণাপত্র হাতে লইয়া মানুষ বইসা বইসা ঝিমাইত। বুকে গুলি নেয়ার জন্য বুক পাইতা দিতো না। প্রতিবাদের মিছিলে ব্যারিকেড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য নাগরিক মানুষের সচেতন স্বাধিকার চিন্তাই যথেষ্ট। মধ্যবিত্ত সমাজটারে ভাঙতে হবে। লোকের ব্যক্তিক অনুভবের জায়গায় বিচারিক বিশ্লেষণবোধ তাজা করতে হবে।
আপনি সরকার দলের লোক কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ নির্লিপ্ততায় রামপাল চান বলেই- দিনকাল এমন যায়। আরো যাবে। আপনি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রনেতা এবং একজন মাধকব্যবসায়ী-মিথ্যাবাদী-অশিক্ষিত সাংসদরে আপনার সংবর্ধনা দিতে হয় বইলা সময়টা এতোটা অসহায়ত্বের। ধ্বংস্তুপের সামনে দাড়াইয়া চিৎকার দিয়া সব ভাঙতে হবে এই আপনারেই। নো ডার্ক সারকাজম। নো থট কন্ট্রোল। কিন্তু থট প্রতিদিন কন্ট্রোলড হইতাছে। বাজার ধরে সার্টিফিকেট কিনতে গিয়া থট কিন্তু বন্দী হইয়া উঠতেছে। দেয়াল তুইলা দেয়া হইতেছে ভাবনার। ইনডিভিজুয়ালিজম গিলে খাচ্ছে সকল তরুণ প্রাণ। পিঙ্ক ফ্লয়েড বলছেন লিভ দ্য কিডস এলোন। শিশুদের ছাইড়া দিতে হইবো। মুক্ত করতে হইবো শৃঙ্খল।