শহর নোয়াখালীতে দুটিমাত্র ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। একটি বিচিত্রা অপরটি অন্যদিন। আজ মোহাম্মদীয়া হোটেল ফেরত পথে পত্রিকাঘরে উত্তরাধিকার পত্রিকাটি আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য পেয়েছি। দোকানদার জানিয়েছেন, কালি ও কলম কিবা উত্তরাধিকার উনারা বিক্রি করেন না। এ দুটি পত্রিকার কোন ক্রেতা এ শহরে নেই। বিজ্ঞান পত্রিকা পাই জিরো টু ইনফিনিটিও খুঁজে পাইনি।
এ শহরের যে স্থানিক পত্রিকা সেটিও মনে হয় কেও কিনে পড়েন না। শহরে ভালো কোন সিনেমা হল নেই। শহরের নিজেদের কোন কোর সাংস্কৃতিক টিম নেই। শহরকেন্দ্রিক কবিতার কাগজ বেরোয় না। কয়েকটা রক ধাঁচের বাংলা ব্যান্ড আছে জানি। এ শহরে কোন প্রতিষ্ঠিত থিয়েটার দল নেই। এ শহরে নিয়ম কইরা নাটক মঞ্চস্থ হয় না। পাবলিক লাইব্রেরীর পরানডা যায় যায়। রাস্তার দুপাশে যেসব হরেক দোকান আমাদের চোখে পড়ে সেসবের দুয়েকটাতে কিছু টেক্সট বইয়ের বাইরে আলাদা কিছু বই মিলতে পারে। তবে ওখানটায় যথারীতি হুমায়ূন আহমেদ, বহুপাঠ্য রবীন্দ্র-নজরুল-শরত, খানিকটা ইমদাদুল হক কিবা আনিসুল হক, কয়েকজন নন্দিত কবির কবিতার বইপত্র, ধর্মগ্রন্থ বা হাদিসগ্রন্থ ছাড়া আর কিচ্ছুটি নেই। দুবছরের এ জীবনযাত্রায় মনে হয় একবার মাত্র আর্ট একজিবিশনের খোঁজ পেয়েছিলাম। তাও ঢাকাই কোন আয়োজন ছিলো।
শহরের মূল রাস্তা থেইকা একটু এগিয়ে আপনি যদি প্রেমিক-প্রেমিকার দলের মতন কইরা পথ চলতে শুরু করেন তাইলে খুব সম্ভব নাজেহাল হবেন। এছাড়াও এ শহরের লোক নন বইলা আপনি নানান বিব্রতকর পরিস্থিতির সাক্ষাত পাইতে পারেন।
একটা শহর যার আত্মা মইরা গ্যাছে সে শহরটায় দু’বছর ধইরা আছি। এইসব আত্মা মইরা যাওনের ঘটনায় যখন দুয়েকজন কেউ হাহাকার তুলে, তখন শহরের বিশাল সংখ্যায় মানুষ গাইল দিয়া কয়- মাদারচোদ এত যহন নাই নাই করস তো এইহানে পড়তে আইলি ক্যান? হাহাকারটা যে বিরোধের নয়, অকৃতজ্ঞতার নয় বরংচ আত্মার মরনে – এ নির্জলা সত্য কেমনে বোঝাই তাগোরে?
পুনশ্চঃ এ শহরের মানুষজনের মধ্যে শহরকেন্দ্রিক ভালোবাসা পৃথিবীর অন্য কোথায়ও নেই। চমৎকার এবং অনন্য একদল মানুষ যারা সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে শুধু একটি শব্দ উচ্চারণে এক হয়ে যেতে পারে মুহুর্তেই।
এ শহরের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন খুবই চমৎকার। এদিকওদিকচতুর্দিক সারি সারি খাবারের দোকান।