এইটা মেবি এখন বলা যাইতে পারে যে আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের পোলাপানদের ভয় পাই। শ্রদ্ধা করি না, সমীহ করিনা, অনুগত নই কিংবা মাইনা চলি না কিন্তু একআধটু ভয় পাইতে হয়। মানুষের জীবনটারে যারা ট্রমাটিক করে তুলে তাদের ভয় পাওয়াটা হয়ত খুব একটা লজ্জার কিছু না। আল্লাহর রহমে যেহেতু একটু ছোটখাটো রাজনৈতিক পরিবারে বড় হইছি, তাই তোমাদের কিভাবে সহনীয় পর্যায়ে ভয় পাইতে হয় এইটা সহজে আবিষ্কার করতে পারা গেল। তো আমি এও মনে করি যে, আমার মতন আরো অনেক অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা তোমাদের নিত্যদিন ভয় পায়, পাইতে হয় আসলে। যেহেতু বেঁচে থাকতে হবে এবং প্রতিদিন ভয় পেলে চলেনা এবং পৃথিবীতে করবার মতন অনেক কাজ আছে তাই কাজকর্ম নিয়ে থাকি এবং খুব একটা তোমাদের দেখা লাগেনা। তোমরা যখন চোখের সামনে আসো তখন না ভালোবাসতে পারি, না ঘৃণা করতে পারি, না পারি বন্ধু হতে। একধরণের ঘৃণা ভেতর থেকে আগায়া আসতে চায় কিন্তু সেটা ভেতরে জমা করলে নিজের ভেতরই একটা গ্লানিবোধ তইরি হয়। আমরা আর কতটুকুইবা তফাতে বাস করি, কতইবা ব্যবধান আমাদের, একই ক্যাম্পাস, একই চায়ের টং, একই আড্ডার টেবিল, একই ক্লাসরুম – কারে আমি ঘৃণা করবো? মানুষেরে, বন্ধুরে, জুনিওরগুলারে? কিন্তু একটা জায়গায় তো দাঁড়াতেই হয় তাই আমি একআধটু ঘৃণা করি / প্রত্যাখ্যান করি বিশ্ববিদ্যালয়রে, শিক্ষকনেতাগোরে, ভাঁড়, রাবিশ চলনের লোকগুলারে। উপাচার্য্যদের মতন বিশাল লোকগুলারে যখন প্রত্যাখ্যান করতে হয় তখন খুব হতাশ লাগে আসলেই।
আমি কখনোই মনে করিনা, আমার জীবন তোমাদের চে খারাপ কিংবা এইযে তোমাদের ভয় পেয়ে বেঁচে থাকতে হয় এ নিয়ে খুব একটা দুঃখবোধ আমার আছে। আমি দারুন ভালো থাকি। এইযে হাজার হাজার মানুশের স্রোত উঠে থমকায়া থমকায়া আমি অন্তত নিজেকে এদের একজন মনে করতে পারি। নিপীড়িত মানুষটার জন্য ব্যথিত হতে পারি। পড়া থুয়া স্লোগানের তেজটা আঁচ করবার জন্য রাইতভর জাইগা থাকতে পারি এখনো।
আমি অবাক হই যখন এইযে একটা সুস্পষ্ট অন্যায় দেখার পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪০-৫০ ক্রেডিটের বইপত্র পড়ার পরও তোমরা একই অসত্য বাক্য বারবার বলতে থাকো এবং তোমাদের বলতেই হয় এগুলি। কিন্তু যেহেতু আমরা মানুষ এবং আমরা শুনতে পাই আমাদের ভেতরের শব্দ তাই সত্যটা আমরা সবাই জানি, তুমিও জানো জানি। তোমাদের যে লোকে ভয় পায় এটাও তোমরা সকলেই জানো। মানুষযে তোমাদের ঠিকঠাক ভালোবাসতে পারে না এও তোমরা জানো। তোমাদের যে বছরের পর বছর ক্যাম্পাসের বাস আটকায়া গেট আটকায়া সমবেত হতে হয় এবং সেখানের দাঁড়ানো মুখগুলো তোমাদের উপর বিরক্ত থাকে খুব কিংবা ভয় পায়- এও তোমরা জানো। তবুও এসবের জন্যতো আমি তোমাদের দোষ দিতে পারিনা। অন্তত আমি যতোটা না শিক্ষক নেতাদের ভালোবাসি, যতটা না উপাচার্য্যদের ভালোবাসি তারচে বেশি তোমাদের ভালোবাসি, ভালোবাসতে চাই। কেননা তোমাদের স্লোগানের সামনে যে মেয়েটা/ছেলেটা দুদিন ধরে খুব উড়ছে, তারে আমি ভালো করে জানি। শি ক্যুড হ্যাভ লার্ন বেটার প্রোগ্রামিং অর সামথিং এলস এবং হ্যাভ আ গুড লাইফ।
ভয় এক আধটু পাই সদা। কিন্তু আমাদের ভয় পেলেই তো চলেনা। খেতে হয়, পরতে হয়, তাই কাজ করা লাগে, অপেক্ষা তো একটা বিষয় থেকেই যায়। বাট ইউ মাস্ট নো- আই এন্ড মেনি স্টূডেন্টস আউট দেয়ার ফিয়ার ইউ। দে কান্ট লাভ ইউ অর হেইট ইউ। তারা ভয় পাইতে চায় না এবং তোমাদের যতদূর পারে ইগনোর করে। কিন্তু জানো, তোমাদের ভয় পাই কিন্তু ঘৃণা করতে চাইনা বলে তোমাদের মুখোমুখি হতে চাইনা। কি বাজে ব্যাপার!
আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় পড়বার জায়গা এবং আরো কিসব গবেষণা, জ্ঞান উৎপাদন টাইপ ব্যাপার কিংবা পৃথিবীকে বুঝবার, প্রশ্ন করবার জায়গা। ভয় পাবার জন্য নয়, মার খাবার জন্য নয়, গরিব বাবা টাকা দিতে পারেনা বলে তোমাদের কাছে হলের গেস্টরুমে হেনস্তা হবার জন্য নয় কিংবা রাতভর না ঘুমায়া শহরের পথেপথে, হলের উঠোনে পড়ে থাকার জন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়না।
আমাদের অনেক পড়াশুনা করবার বিষয় পইড়া আছে পোলাপানদের একটু যদি পড়বার সুযোগ দিতো সুপ্রিমরা। আই আর্গ ফর দ্যাট। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মার খাচ্ছে, রাত জাগতেছে, আন্দোলন করতেছে, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও এগুলি ক্যান করবো আমরা পড়াশুনা থুয়া? তবু ভয় বুকের ভেতর থেকেই যায় এবং সকাল হতেই থাকে। একটা অপেক্ষা তো থেকেই যায়।
-
Previous
শিশুদের বইপত্রে সেক্স এডুকেশন এবং অন্যান্য -
Next
গ্রামে হার্ডওয়ার দোকান বাইড়া গেছে, বেচাকেনা কম