আমাদের বিদ্যালয়গুলারে এতোটা পলিটিক্যাল কইরা দেখা নিয়ে আমি নিয়মিত ভয় পাই আর হতাশ থাকি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ হয় রাজনৈতিক সমাবেশ থেইকা, যেন হরদর করে আজ একটা, কাল দুইটা, যা ভাল্লাগে। এর প্রয়োজন আছে কি নাই এইসব নিয়ে কোন আলাপ নাই, গ্রাউন্ড স্টাডি নাই। কেবল ভোটের দরে এইসব নির্মাণ হইতে থাকে। এইসব বিদ্যালয় যারা চালান সেইসব উপাচার্যরা বিভাগ খুলেন মনের খায়েশে, চায়ের টেবিলে আড্ডায় কিংবা বক্তৃতা দিতে গেলে হয়ত কথা পান না বইলা একটা বিভাগ খোলার ঘোষণা দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেন। মন চাইলো রুম একটা নিয়ে চালু কইরা দিলেন একটা ডিপার্টমেন্ট। যারা বিদ্যালয়গুলিতে মাস্টারি করেন তারাতো সরকারি চাকুরি ছাড়া আর কিছু করেন না এদেশে। বিদ্যালয়ের মান, প্রয়োজনীয়তা, উদ্দেশ্য, রিলেভেন্সি এইসব নিয়ে কোন আলাপ দরকার হয় না কখনো।
আজ ১১ মে কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান করায় শোকরানা মাহফিল হইলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এই মহা সমাবেশের আয়োজন করলো হেফাজতিরা। আল্লামা শফি হুজুর ছিলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি। এই হেফাজতিরাই ৫ মে ২০১৩ তে ঢাকা শহর তান্ডব চালাইছিলো। তেরো দফা দাবি জানাইছিলো। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হইলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালি সেক্যুলারদের মা জননী। উদ্যান থেইকা শেখ হাসিনা আজ ‘কওমি জননী’ উপাধি পাইলেন। উনি আবার মানবতারও জননী। গণতন্ত্রের জননী অবশ্য এখন জেলে। এইযে কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রীরে রেগুলারের সাথে ইকুয়ালাইজ করা হইলো – ঠিক কি স্কেলে দুইটা প্রোগ্রাম সমমান হইলো, কারিকুলাম কতোটা একটা আরেকটার সাথে মিলল, পৃথিবীব্যাপী যে শিক্ষা প্রদান করা হইতেছে তার সাথে কতোটা পাল্লা দিয়ে চলতে পারবে কওমি এডুকেশন তার কোন বাচবিচার ছিল না এখানে। কওমি কারিকুলামে কি কি পরিবর্তন করা হইছে? ওরাতো ওদের বিদ্যালয়ে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করতেও অস্বীকৃতি জানায়। এই হেফাজতিদের মতাদর্শ, যারা বোর্ডটা চালাইতেছেন তাদের চিন্তাশীলতা – এইগুলো নিয়ে কতটা বাচবিচার হয়ে আজকে ইকুয়েল করে দেয়া হইলো? কোন বাচবিচারের খবর ত পাইনি আমি পত্রপত্রিকায়। এটা স্রেফ একটা রাজনৈতিক ঘোষণা হিশেবে আসল তাহলে। বাংলাদেশবিরোধী হেফাজতি তেরো দফা কি আমরা ভুইলা গেছি? তেতুল হুজুরের বয়ান কি সবাই ভুইলা গেছে? শফি হুজুরদের মতাদর্শকে স্বগৌরবে গ্রহণ কইরা এবং বাজারদরদিয়া কি ধরণের বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বানাইতে পারবে? কোন প্রশ্নের উত্তর মিলবে না। শেখ হাসিনা একটা পলিটিক্যাল স্পেস থেকে এইটা করলেন। এবং এর মধ্য দিয়ে এই কওমি এডুকেশন একটা রাজনৈতিক আঘাতের মধ্য দিয়ে যাবে নিরন্তর। এর শুরু যেহেতু রাজনৈতিক শোকরানা দিয়ে তাই এই রাজনৈতিক ময়দায়ে আরো বহুবার শফি হুজুরদের আমরা নামতে দেখবো হয়ত। আরো ৫ মে তইরি হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু থাকলো।
শিক্ষারে এই আকারে আগায় নেয়াটা ভয়ঙ্কর আর বিধ্বংসী আচার। জাতীয় দৈন্যদশার পুনঃপ্রকাশ। এইসবে আমার খুব হাহাকার লাগে। বিক্ষুব্ধ লাগে। ক্লান্তি লাগে। কেউ বুঝতে চায় না শিক্ষাটা আসলে কি বা কেন। কেনইবা আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বানাবো বা মাদ্রাস বানাবো। সেইসব শিক্ষা আমাদের কই নিয়ে যাবে? সেক্যুলারিজম বা প্রগ্রেসিভনেসের আলাপ তো একদিকে আছেই এর বাইরে গিয়া জাস্ট সাস্টেইনেবল ইকোনমি আর পৃথিবীর মানুষের যে উৎপাদনশীল চিন্তা তার সাথে খাপ খাইয়ে চলার কথা বিচার করলে দেখা যাবে এইগুলি থেইকা কিচ্ছু হইতেছে না আসলে। এইযে বিদ্যালয়গুলি শেখ হাসিনারা বানান এগুলি কি উৎপাদন করতেছে এইটা আমার প্রায়োর কুশ্চেন। এইসব বিদ্যালয় এতোসব পলিটিক্যালাইজেশনের মধ্য দিয়ে না পারবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চারটা আস্পেক্ট থেইকা দেশ নির্মাণের স্বপ্ন ছিলো সেগুলাকে আগায় নিতে; না পারবে মননশীল, উৎপাদনশীল জনগণ তইরি করতে কিংবা আধুনিক ও সাস্টেইনেবল ইকোনমিওয়ালা একটা দেশ দিতে আমাদের। তো আমরা তাহলে কই যাইত্যাছি?
এদেশের আওয়ামী সেক্যুলার চিন্তার লোকেদের এই ঘটনায় কোন স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে না। ওদের মননশীল, সুশীল, আধুনিক আর গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার তুলনামূলক শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছেন মা হাসিনা। নতুন যে বিদ্যালয় বানানো হইতেছে অইগুলানের উপাচার্য, অধ্যাপক আর বিভিন্ন কমিটিতে জায়গা পাওন কিংবা বিভাগীয় প্রধান পর্যন্ত পৌঁছাইতে পারাই উনাদের জীবন থেইকা চাওয়া। এইদেশের রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী বা অধ্যাপকদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপারটা বুঝেন না। তো দেশ একই জায়গায় ঘুরপাক খাইতে থাকে। আমরা এইসব দেইখা নির্লিপ্ত নির্বিবাদ নাই অবশ্যই। তেরোতে যারা হেফাজতের বিরুদ্ধে ছিলো আজ তারা অনেকেই হতাশ। অনেকে দেশছাড়া, অনেক রক্ত ঝরছে, অনেক খুন হইছে। বাংলাদশে তুলনামূলক হারে সাম্প্রদায়িকতা মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে গত দশ বছরে। তবুও লড়াই চালাই যাইতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে। এবং বলতে হবে আওয়ামীলীগ নিম্নবুদ্ধির রাজনীতি করতেছেন আর শেখ হাসিনা ভুল।