বাংলাদেশের নীতি নির্ধারনী পর্যারের অধ্যাপকরা এবং সেলিব্রেটেড বুদ্ধিজীবীরা রেগুলার গবেষণায় জড়িত ছিলেন কম। এইজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে গবেষণার গতিশীল কোন আচার গইড়া উঠে নাই। যারা নিবেদিতভাবে গবেষণায় জড়িত ছিলেন / আছেন তাদের নির্মোহ জীবনযাপনের কারণে এবং পলিটিক্যালি কম বুদ্ধির লোক হওয়ায় ডিসিশন মেকিং বডিতে জায়গা না পাওয়ার একটা ব্যাপার থাকতে পারে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেইকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথেষ্ট বিনিয়োগ না থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শক্তিশালী কর্পোরেট বিনিয়োগ কালচার গইড়া না উঠায় গবেষণা কাজকে নিয়মিত প্রণোদনা দেয়াও সম্ভব হয়নি। দুয়ে মিলিয়ে যেটা হলো বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান সময়ে সর্বহারা হয়া উঠলো। এই সর্বহারা হয়ে উঠা সময়ে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলার উত্তরণের পথ কি হইতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মূলত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিশেবে পৃথিবীব্যাপী বিচার করা হয়ে থাকে সে জায়গা থেকে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গতিশীল গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই এই মনঃবাসনা নিয়েই আলাপ আগাইতে চাই। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা পরিচালনা করেন অধ্যাপকরা তাই (১) অধ্যাপক তইরির পক্রিয়াটা এইখানে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়, একইসাথে শিক্ষকদের (২) অনুকূল পরিবেশে গবেষণা করবার জন্য অর্থ সরবরাহও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গা থেকে প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা আলাপের শুরুতেই রাখা দরকার। এই নীতিমালা ভালো অধ্যাপক তইরিতে ব্যর্থ হবে বলেই মনে হয় প্রাথমিকভাবে। বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যাবে কমেন্টের লিঙ্কে। ভালো অধ্যাপক তইরির জন্য যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই খসড়া নীতি শিক্ষকদের গবেষণাকে প্রধান মাপকাঠি হিশেবে বিচার করে নি যেটা জরুরি। মুলত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মাস্টার হিশেবে না দেখে গবেষক হিশেবে দেখবার প্রথাই গড়ে উঠেনি। সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি দাঁড়ায় তা হল গবেষণার জন্য ফান্ডিং। সেই আলাপের সূত্রে যেতে হবে শিক্ষার বাজেটে। এই পেটমোটা বাজেটের যুগেও গতবছরের তুলনায় গড় হিশেবে এ বছর শিক্ষার বাজেটের পরিমাণ কম ছিল। এতো কম বাজেট দিয়ে আগাছার মতন গইড়া তোলা (আঞ্চলিক ও জাতীয়) বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব না। তাই নির্মোহভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দিকে আঙুল তোলার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কি ধরণের প্রতিষ্ঠান হিশেবে নির্মাণ করতে চায় সেই প্রশ্ন আমরা এইখানে তুলতে পারি অবশ্য। ব্যাপারটি এইযে, গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত পরিবেশ তইরি করা সম্ভব না হলে শিক্ষকরা গবেষণা কাজ করবার সুযোগই পাচ্ছেন না। কিন্তু গবেষণা না থাকলেও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তইরি আর হরেক নামের যত্রতত্র খামখেয়ালি প্রক্রিয়ায় বিভাগ খোলা তো বন্ধ নাই। এইসব বিশ্ববিদ্যালয় আর বিভাগগুলোতে গরিব দেশের তরুণরা শিক্ষা (ডিগ্রী) অর্জনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির আশায় প্রতি বছর ছুইটা আসতেছেন। সেই শিক্ষার্থীরা আবার চক্রাকারে শিক্ষকও হচ্ছেন নিয়মিতভাবে। স্বাভাবিকভাবে, শিক্ষকরা গবেষণায় জড়িত না থাকায় শিক্ষার্থীদেরও গবেষণায় উৎসাহিত করতে পারছেন না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উৎপাদনশীল গবেষণায় জড়িত না থাকায় বিশ্ববিদ্যায়গুলো নতুন জ্ঞান উৎপাদন করতে পারছে না। এই আকারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি ন-উৎপাদনশীল ও গতানুগতিক চোতামুখী বিদ্যালয় এবং সামাজিক স্ট্যাটাস (একাডেমিক ডিগ্রী) বিলানো প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
মোটের উপর গবেষণার পরিবেশ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উতপাদনশীল ও নির্মাণশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়নি। সময়ের চাহিদা মেটাতে তাই মেধাবী শিক্ষক / গবেষক নিয়োগের সাথে সাথে গবেষণার বাজেট বৃদ্ধি সর্বহারা বিশ্ববিদ্যালয় থেইকা নির্বাণ দিতে পারে।
-
Previous
জাতিসংঘের পেটে ঢুইকা বইসা থাকা শিক্ষার্থী বিষয়ক -
Next
শোকরানা মাহফিল ও কওমি বিদ্যালয় প্রসঙ্গে