নোবিপ্রবি শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ আন্দোলন আমার জন্য প্রথম কাজের জায়গা। ২০১৪ তে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যখন খাঁখাঁ মরুভূমিতে কিছু একটা করবার জন্য, বলবার জন্য, শুনবার জন্য হাহাকার করতেছিলাম, আকুলিবিকুলি করতেছিলাম সেসময়কার প্রথম মিলন আসর হলো এই শীতবস্ত্র আন্দোলন। সে আসরে ০৬, ০৭, ০৮, ০৯ এর অসংখ্য মানুষজন ছিলেন। আমাদের নিজেদের প্রত্যেকের একটা স্বপ্নের জায়গা ছিলো। কিছু বলবার একটা অনুভব ছিলো। পরবর্তী সময়ে এখন যদি দেখি শীতবস্ত্র আন্দোলনের প্রত্যেকটা মানুষ এই ক্যাম্পাসের জন্য একটা আলাদা আন্দোলন হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। চিন্তাভাবনার নানা দেয়াল, ফাঁকফোকর পেরিয়ে, পথঘাট মাড়িয়ে ভিন্ন ভিন্ন মঞ্চে ছড়িয়ে পড়েছে অনেকেই। নতুন নতুন ভাবনায়, নানান অদেখার মরাগাঙ ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এখন আধুনিক, মননশীলতা ও সুন্দরের দিকে এগিয়েছে খানিকটা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যেসব সৃজনশীল কাজ হচ্ছে, নতুন নতুন আয়োজন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় যে অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়, আমার ক্যাম্পাস সেদিকে যে একটু করে একটু এগোচ্ছে – এসব আন্দোলনের পেছনের মস্তিষ্করা অধিকাংশ লোকই শীতবস্ত্র আন্দোলন থেইকা জন্মাইছে। এ আমার জন্য বিশাল ভালোলাগার অনুভব। আমরা যারা একসাথে কাজ করেছি একসময়, সবার ভাবনা চিন্তা এক ছিলোনা – দিজ ইজ দ্য পয়েন্ট আই মাস্ট এপ্রিশিয়েট। বিতর্কিত, সমালোচিত, আলোচিত, প্রশ্নময় সময়। দেবী দেবী করে পূজোভক্তি করে চলার ব্যাপার ছিলো না। একসাথের মানুষগুলো নিজেরা নিজেদের সমালোচনা করেছি, আড্ডায়, চায়ের কাপে, ক্যাম্পাসের অলিতে গলিতে তুখোর তর্কবিতর্ক হয়েছে। মান অভিমানের পালায় দুরত্ব তইরি হয়েছে কখনো, আবার কাছাকাছি এসেছি। একটা ভাঙ্গাগড়ার আন্দোলন যুক্ত হয়েছে।
ব্যক্তি রবিউল আউয়ালের একান্ত অনুভবের জায়গায় আমি খুবই আনন্দিত বোধ করি যখন এসব ভাবনায় আসে। আমার প্রশংসা করতে ভাল্লাগে না। ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা, ঢেউ নিয়ে উল্লাস বোধ করি না। উল্লাস বোধ করি পরিবর্তনে, শুদ্ধতায়, মুক্তিতে। আমরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলাম যেখানে প্রত্যেকটা মানুষ নিজেদের ভাবনাগুলি পরিপূর্ণ স্বাধীনতায় প্রকাশ করতে পারবেন, কাজকর্ম আর সৃষ্টিতে বক্তব্য থাকবে, স্বতন্ত্রতা থাকবে, সুন্দর থাকবে, ম্যাচিউরিটি থাকবে; ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন প্রকাশিত হবে নানান শাখা প্রশাখায়। আমার মনে হয় আস্তে আস্তে আমরা সেদিকে আগাচ্ছি। এইসব আন্দোলনে, পরিবর্তনের পথে ডানাভেঙ্গে দেয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা ছিলো। তবুও অনেকদূর এগিয়ে এসেছি আমরা। মুক্ত হোক এ অঙ্গন। প্রিয় ফুলের দলেরা – ছয়ের, সাতের, আটের, নয়ের মানুষজন আপনাদের জন্য ভালোবাসা। মানুষ আর মুক্তির এ যাত্রা নিরন্তর।