এই দেশের পোলাপান হিশেবে শিখতেছি একটা ভোঁতা আবেগ চাইপ্পা ধইরা থাকন, সেইটারে গ্লোরিফাই করন, একআধটু এদিকসেদিক কিছু কইরা শ্যালো অপরাধভোগে ভুগন আর সকালে সন্ধ্যেয় কাজকাম না কইরা হতাশ হওন। এক প্রকার মধ্যবিত্তীয় ম্যারম্যারা রোমান্টিসিজম। ম্যালা লোকেই তো স্কুলে গেছে, দেয়াল টপকাইছে, পয়সা ছিলোনা বইলা একবেলা ভাত খায় নাই, বাপ টাকা দিতে পারেনাই বইলা কোনদিন পাহাড় দেখবার পারে নাই – এইগুলান গ্লোরিফাই করনের ব্যাপার না, এইগুলা হলো ডেভেলপিং কান্ট্রিতে জন্মলাভ করনের দায়, দিস ইজ অল এবাউট সারভাইভাল এন্ড ইউজুয়াল লাইফ। আমাদের আছে এক প্রকার ধর্ম আরেক প্রকার মধ্যবিত্তীয় সোশ্যাল প্রিজুডিস। পোলাপাইন প্রেম কইরা অপরাধভোগে ভুগবে, একটু মদ খাইয়া অপরাধভোগে ভুগবে, পড়াশুনা কইরা না কইরা অপরাধভোগে, রাজনীতি কইরা অপরাধভোগে ভুগবে আর জিনিশপাতিকে ভুল চোখে দেখবে। অথচ প্রশ্ন করতে শিখবে না, সহজ হইতে শিখবে না। এটা একটা সোশ্যাল স্ট্রাকচারাল প্যাটার্ন যে পুরাতনকে লইয়া বিলাপ করতে থাকা। নতুনের দিকে আগাইতে না পাইরা পেছনের দিকে তাকায়া থাকা। আমরা শিখেশিখে বড় হচ্ছি সেই পুরাতনগুলি, নতুন যা কিছু শিখছি ওসবও অনিয়মে আর অসভ্যতায়। এইযে জীবন তারে আমি মানতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজকালকার দিনের লেখালেখি পড়াতো বিরাট যন্ত্রোণা, প্রচন্ড রকমের পলিটিক্যাল সিনেমাটিক ম্যানিপুলেশন আর শ্যালো অবজার্ভেশন। এইযে রোহিঙ্গা রাখাইন সংকট এইটারেও গ্লোরিফাই করে লোকে মানবতা দিয়ে কিন্তু বুঝতে চায় না এইটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরাজয় ছিলো এবং মানবতা এতো সহজ জিনিশ না। একটা অগণতান্ত্রিক, জনগনবিমুখ, পশ্চাদমুখী এবং স্বেচ্ছাচারী রাষ্ট্র এবং গরিব দেশ যে নিজের লোকেদের এখনো মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে নাই, তার মানবিক হওয়াটা অতো সহজ কাজ না।
আমাদের এই অঞ্চলে অধিকাংশ লোক জীবন কি এইটা টের পায় না। একটা ঘোর, অদেখা আর মিছেমিছে জগতে বাস করে, ভাত খায়, ঘুমায়, বিছানায় শোয়, বাচ্চা প্রডিউস করে আর মরে যায়। সতেরো কোটি জনসংখ্যা পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল জুইড়া। এইযে লোকে মন্দিরে যায়, মসজিদে যায়, এইযে টিভি দেখে, ভোট দেয়, রাজনীতি করে খুব কম লোকেই জানে কেন সে এগুলি করে। এবং এইযে নাজানা, প্রশ্নহীন জীবন বয়ে চলা- এইটারে আবার গ্লোরিফাই করে। এইগুলান সংকট এবং এগুলো যে ঠিক না- সেটাই ব্যাপার। সবচে বিচ্ছিরি ব্যাপার এখানে সমাজচরিত্র এবং সংশ্লিষ্টের চারিত্রিক আচরণের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করার অভ্যেস নাই। আমাদের সিনেমা আর্ট মজমাঘর এবং এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখনো অনেক বেশি প্রশ্নহীন ঘটনাপ্রবাহ। এইজন্যে যত অসভ্যতা, অসুন্দর, মিথ্যে, ঘোর, সস্তামি, আবেগ এইগুলি গ্লোরিফাই হইতে থাকে আর সমাজে কথা বলে, লিড করে বোকাচোদা লোকেরা আর রাস্তার মাঝখান দিয়া মঞ্চ খাড়া করাইয়া পরিবর্তন আর উন্নয়ন গণতন্ত্রের দর্শন কপচায়। এবং এখানে নিজেকে ভালোবাসা, আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠা, সিস্টেমকে একটু নাড়াই দেওন, পৃথিবীকে চেনা, পড়াশুনা করে সভ্য হয়ে উঠা, মেরুদন্ডটা সোজা করে দাঁড়ানো, সত্যনিষ্ট থাকা এগুলো এখনো জীবন হয়ে উঠে নাই, প্যাশন হয়ে উঠে নাই। গণতন্ত্র, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ আমাদের জীবনে খুব কম সময়ে প্রকাশিত ছিলো।
সমাজ যদি আগাইতে না চায়, ভুলভাল জিনিশকে গ্লোরিফাই করে এবং সেটাকেই সঠিক বলে লিগ্যাসি চলতে থাকে, সমস্যার প্রকৃত কারণকে না ধইরা মোড়ক নিয়া দৌড়ঝাপ করে; সমাজ যদি আধুনিক দর্শন, বিজ্ঞানচিন্তা, বিজ্ঞান উৎপাদনের দিকে চোখ না রাখে; বিশ্ববিদ্যালয়গুলা যদি খালি এজেন্ট হিশেবেই কাজ করে, যদি সেখানে জ্ঞান উৎপাদনের আয়োজন না থাকে, যদি গবেষণা না হয়, যদি ইন্টেলেকচুয়ালিটি শব্দটা শবঘরে চলে যায়; লজিক্যাল রিজনিং, চিন্তাশীল এবং মননশীল দর্শনচর্চা যদি মানুষের মননে না দাঁড়ায়; যদি তরুণরা মরে যেতে থাকে প্রতি অমাবস্যায়, যদি মুক্তিমানুষআরমিছিল থমকে যায়, তাহলে নাগরিক জীবন ও অধিকার বলে কিছু থাকে না, সোশ্যাল ক্যাওজ বাড়তে থাকে দিনান্তে, আনফিটনেস তইরি হয়, সমাজ অস্থির হয়ে উঠে এবং অপরিকল্পিত অবৈজ্ঞানিক যাত্রায় উদ্ভট রাজার শাসনে দুলতে থাকে লোকালয়। বড় বড় বিলবোর্ডে ছেয়ে যায় মফস্বল। রাজা যায় রাজা আসে, কিন্তু আমরা ঠায় দাঁড়ায়ে থাইকা বিলবোর্ড দেখি আর বিলাপ কইরা কান্দন করি।