আমি বাবারে বললাম আমরা এই সেপ্টেম্বরেই মেবি বের হয়ে যাবো। আর হয়তো এই বছর পুরোটা লেগে যাবে সেটাপ করতে। উনি বললেন, তাইলে তোমরা এক বছর দেরি করলা ইউনিভার্সিটিতে। আমি বললাম বিএনপির আন্দোলনের সময় না ক্লাস হইলো না, তার জন্যই এমন হইলো। উনি বললেন এবছর এমন কিছু হবেনা। তুমি পাশ করণের বছর অলওয়েজ ঝামেলা লেগেই থাকে। তুমি এসএসসি দিলা ঝামেলার মইধ্যে, এইচএসসিও তাই, ইউনিভার্সিটির শেষ বছর এখন নির্বাচনের বছর পড়লো। আমি জানাইলাম আমরা এই বছর কনভোকেশন পাবো মনে হচ্ছে। ভিসি আমাদেরকে নিয়ে কনভোকেশন করার ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড। উনি বললেন এইটা না পুরাতন ছাত্রদের দেয়। আমি বললাম আমরাসহ পুরাতন আরো চার ব্যাচের সিনিওরদের দিবো। এই বছর রাষ্ট্রপতি আসবে তাও জানাইলাম। উনি বললেন, গতবার কে আসছিলো? আমি বললাম শিক্ষামন্ত্রী। উনি কিছুটা থাইমা বললেন, তোমাদের ভিসি তাইলে ভালোই পলিটিক্যাল, আওয়ালীমীগের লোক, টিভি টকশোতে দেখা যায় মাঝেমাঝে। আমি বললাম ক্যাম্পাসে এমাথা থেকে অইমাথা পর্যন্ত দালান তুলতাছেন, অনেকগুলা নতুন বিভাগ খুলছেন। আমাদের এখন ২৫ টা বিভাগ, ভাবা যায়? উনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের লোক মেবি। পলিটিক্যাল না হইলে এতোকিছু করা যায় না। উনি বললেন ভিসিগোরে প্রশাসনিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয় সরকার আর দালান তোলা মানে টাকা। তারপর বললেন, সাবজেক্ট খুইলা, শিক্ষক নিয়োগ দিয়া কি হইবো করাপটেড শিক্ষক – শিক্ষার মান তো উন্নত হইতেছে না। আমি মনে মনে ভাবলাম এইসব কথাবার্তা হয়তো মধ্যরাইত পর্যন্ত টকশো দেইখাই আন্দাজ করতেছেন কিংবা দেরিতে পাশ করতেছি বইলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কিছুটা নাখোশ। এতোসব কথা কইতেছেন, কোটা আন্দোলন নিয়া কিছু বলতেছেন না দেইখা খানিকটা অবাক হইলাম। উনি বললেন, তোমাদের অই কনস্ট্রাকশনের সাবজেক্টটা নাই? আমি জিগাইলাম সিভিলের কথা বলতেছেন। উনি বললেন, হ্যাঁ। এই সাবজেক্টের কথা উনি আমারে মনেহয় দুয়েক আলাপ বিরতিতেই জিগান। নিজে কনস্ট্রাকশনে কাজ করেন বইলা কিংবা রাস্তাঘাট মেরামতের কাজে গ্রামে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে বেশি দেখেন বইলা উনি এই ব্যাপারে বায়াসড। কিংবা যেহেতু পাশের বাড়ির ঝুটন দা চুয়েটের সিভিল ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর তারজন্য বিষয়টা উনি গুরুত্ব দিতেছেন। আমি বললাম না। সিভিল / মেকানিক্যালের ব্যাপারে ইউনিভার্সিটির আগ্রহ আছে বইলা মনে হইতেছে না। উনি বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তো মনে হয় মানের অবস্থা ভালো না তোমাদের বড় ভাইরা চাকরি বাকরি পায় কেমন? আমি বললাম, চাকরি সবাইই পায় আসলে বেতনটা কম আরকি। এই বিশ পচিশ হাজার টাকা পাইতে পারে। কিংবা হায়েস্ট ধরেন ষাট সত্তর পায় কেউ কেউ। বললাম রিজিওনাল ইউনিভার্সিটি তো তাই পলিটিকস একটু বেশি আর এক আধটু সমস্যা তো থাকবেই। উনি কিছু বললেন না। পকেট থেকে টাকা বের করতে করতে বললেন হার্ডওয়ার দোকান বাইড়া গেছে, দোকানে বেচাকেনা কম। কত লাগবে বইলা আমার দিকে তাকাইলেন। আমি বললাম বাড়ির রসিঘর ঠিক করছেন দেখলাম আর বড়ই গাছটা কাইটা ফেলছেন। উনি বললেন, প্রতি বছর একটা করে ঘর দেয়াই লাগে। গতবছর দোকানের নতুন ঘর তুললাম, এর আগের বছর দিলাম অইটা (আমাদের দোকানের সামনে একটা গোডাউন আছে অইটার কথা বলতেছেন), এইবছর দিলাম রসিঘর, পয়ত্রিশ হাজার খরচ করলাম। আমি বললাম, আমি জুলাইয়ে ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিবো কিছু। তারপর উনি বললেন, সরকারি চাকরি করবা না, ম্যাজিস্ট্রেট বা বড় অফিসার কিছু? আমি বললাম, আমার ওগুলি ভাল্লাগে না। আমি আরো পড়তে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চাই যদি সম্ভব হয়। উনি বললেন, টাকা তো এগুলায় হবে না। এখন নাই পরে আবার আইসা নিও। আমি বললাম আচ্ছা। তারপর বললাম আমি তাইলে যাই, তেইশ তারিখ পরীক্ষা আছে। উনি বললেন আসবা করে আবার? আমি বললাম, ফাইনাল ইয়ার তো চাপের মধ্যে আছি। রোজায় আসবো।