১. ০২ আগস্ট অতর্কিত আক্রমণ, রক্তমাখা পাঞ্জাবী, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে হাসপাতালের বিছানা, চিকিৎসা, কনসাল্টেশন কক্ষ, মেডিসিন, নোয়াখালী শহর ছেড়ে ঢাকা এসব নিয়ে গত কটা দিন কেটে গেলো। আমি খানিকটা ক্লান্ত, ক্ষুব্ধ আর যন্ত্রণাকাতর মস্তিষ্কে চারপাশের মানুষগুলোকে দেখছি। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আমার জন্য যতটা ভালোবাসার জায়গা একইসাথে অনেকখানি যন্ত্রণারও। এ এক অদ্ভুত, আশ্চর্য্যকর অঙ্গন; অন্তত সুস্থ মানুষের প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হবার কথা। যারা অসুস্থ তাদের জন্য তীর্থস্থান হতে পারে হয়ত! আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটা নিরেট, শুভ্র, শিউলি ফুলের মতন স্বপ্ন ছিলো কিংবা এখনো আছে। স্বপ্নদেখাটা কখনো কখনো একটা অপরাধ। সে অপরাধের প্রেক্ষাপট লিখতে বসেছি। এগুলো একশো এক একরের শব্দ; বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্র আর মুক্তির স্বল্পদৈর্ঘ্য অগুরুত্বপূর্ণ আখ্যান। খুব কৈশোরে মনে হতো বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের বাইরের কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় সংকট আর বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সংকটের একটা যোগসূত্র আছে। সেইসব সংকট আমাদের আলাপের বিষয়। সংকটগুলো আমাদের খুব টানতো যতটা টানতো আবুলহাসান আর জীবনানন্দের মতন লোকেরা। শিক্ষা বাণিজ্যিক হয়ে উঠবার জমানায় কিংবা রাষ্ট্রীয় সংকটের বাজার যখন চওড়া তখন আমার/আমাদের মস্তিষ্ক বাণিজ্যিক হয়ে উঠেতে পারেনি অতোটা। তাতে যা হলো বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে হয়ে উঠলাম অনিরাপদ, দণ্ডিত আর বিপদজনক। রক্তাক্ত। গল্পে ফিরে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দিনগুলো একদিকে ছিলো চমৎকার। উৎসবের, আনন্দের বই, কবিতা আর গানের আরেকদিকে বেশ যন্ত্রণারও। ব্যাপার হলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই অনেক হুমকিটুমকি পেয়ে আসছিলাম। গান, কবিতা, ছেলেমেয়েদের একসাথে চলাফেরা, প্রতিবাদ, ছাত্র আন্দোলন করার জন্য হুমকি। এসব হুমকিআঘাত আমার/আমাদের জন্য নিত্যদিনকার ব্যাপার হয়ে উঠেছিলো একটা সময়। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়াশুনা করেছি এবং সেখান থেকে আরেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আমি দেখলাম একসাথে ছাত্র আন্দোলন করা, ওয়েলফেয়ার মুভমেন্ট করা, ইয়ুথ অর্গানাইজেশন করা, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, বই পড়া, পত্রিকা বের করা, এমনকি একদল ছাত্র একসাথে হাঁটাচলা করা – এসব খুব অন্যায় এবং অপরাধমূলক কাজ। এবং সেসবের জের ধরে ১০/১৫ জনের অতর্কিত আক্রমণে আমি এখন মাথায় আঘাত নিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণার দিন পার করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিককার দিনগুলো। সাল ২০১৪। দেখলাম একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অসংখ্য শিক্ষার্থী দেশের নানা প্রান্ত থেকে জড়ো হচ্ছে, অসংখ্য তরুণ মুখ – সেখানটায় সম্মিলিত কিছু হচ্ছে না; শিক্ষার্থীদের মননচিন্তাভাবনা শিক্ষার বিকাশের খুব কোন সৃষ্টিশীল আয়োজন নেই। আমরা কজন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম এবং আমাদের মনে হলো নিজেদের দেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, একাত্তর, স্বাধীনতা, আধুনিকতা এগুলোকে ঘিরে সবার ভাবনাকে প্রকাশ করবার একটা মঞ্চ দরকার। একদম তরুণ কিছু শিক্ষার্থী মরা গাঙে, ১০১ একরের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কাজটা শুরু করলাম। যতোটা রোমাঞ্চকর চিন্তা থেকে কাজগুলো শুরু করলাম দেখা গেলো ব্যাপারটা ততটা রোমাঞ্চকর নয়। আমাদের উপর বাধা বিপত্তি আসতে থাকলো এক এক করে। প্রথমবারের মতন বিজয় দিবস উদযাপন করতে গিয়ে একদল শিক্ষার্থীর আক্রমণের স্বীকার হয়ে আমাদের ফিরে আসতো হলো। ইভ টিজিং বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেও বাধা পেয়ে আমাদের সরে আসতে হয়ে এসেছে। মাদকাসক্তি, ক্ষমতালিপ্সা, অন্ধ রাজনৈতিক চর্চা, শেকড়বিমুখ অবস্থান, মূল্যবোধের অবক্ষয়, অশিক্ষা, নৈতিক স্খলন, মৌলবাদ আর সঙ্কীর্ণ মননে বন্দী কিছু লোক যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে গিলে খাচ্ছে দিনের পর দিন তাদের কাছে আমরা বহুবার হেনস্তা হয়েছি। নানান আক্রমণের স্বীকার হয়েছি এবং আজো হচ্ছি। আমরা যা করতে চেয়েছি সেসবের কোনটিতে আমাদের নেতা হবার, জনপ্রিয় হবার কিংবা ক্ষমতাবান হয়ে উঠবার আকাঙ্ক্ষা ছিলো না। চেয়েছিলাম শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞানচর্চা আর দেশের মানুষদের নিয়ে কাজ করে আমরা একটি মনশীল বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তান হয়ে বেড়ে উঠবো। সে যাত্রায় কখনো রক্তদাতাদের সংগঠন নিয়ে, কখনো শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ আন্দোলনের মতো মানবিক আবদার নিয়ে, ছাত্রদের নৈতিক অধিকারের পক্ষে রাস্তার আন্দোলন নিয়ে, কখনো বিজ্ঞান চিন্তার বিকাশের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের শিল্প সংস্কৃতি চর্চায় ছোট পত্রিকা প্রকাশসহ, নানান ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা উৎসব উদযাপন নিয়ে আমরা কাজ করে এসেছি। এবং এসবের অনেক কিছুই ছিলো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম।
২. আমাকে আক্রমণ একটা দীর্ঘ সময়ের প্রতিক্রিয়ার সম্মিলিত রূপ বলে আমি মনে করি। এই আক্রমণের একটা সামগ্রিক বার্তা আছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধাত্বে ডুবিয়ে অন্যায় অবিচার অত্যাচার নিপীড়নের মধ্য দিয়ে অশ্লীল ক্ষমতায় কুক্ষিগত করে রাখতে চায়; আমি এবং আমরা সেসবের বিরুদ্ধে একটা কণ্ঠস্বর হয়ে বেড়ে উঠেছি। আর্টকালচারহিস্ট্রিটেকনোলজি মিলিয়ে যে পরিবর্তন শুরু হচ্ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় সেগুলো হজম করা অতটা সহজ ছিলোনা সকলের জন্য। স্লেভারি, ডেপ্রাইভেশন আর ইগনোরেন্স এতোটা ডুবিয়েছে যে ওদের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে ফুসফুসে বিশুদ্ধ হাওয়া চালান করবার মতন শক্তিটুকু হারিয়ে গেছে। তাই আঘাত করতেই হলো আমাকে/আমাদেরকে। আমাদেরকে যদি থামিয়ে দেয়া যায় তাহলে নিপীড়ন, নির্যাতন, অন্যায়ের প্রতিবাদ, একটি মননশীল বিশ্ববিদ্যালয় গড়বার প্রচেষ্টা এসব অনেক কিছুর পক্ষে কাজ করবার, দাঁড়াবার, কথা বলবার মতন একদল মানুষকে থামিয়ে দেয়া যাবে। ওরা আমাকে আক্রমণের মধ্য দিয়ে ওদের সর্বশেষ বার্তাটি পাঠিয়েছে, “তুমি থেমে যাও, তোমরা থেমে যাও”।
ওদের আমাকে আক্রমণ করা ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিলোনা হয়ত। ওরা আমাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে বলার চেষ্টা করেছে যাতে আমি সাধারণ শিক্ষার্থীর এইসব আন্দোলন, উৎসব উদযাপন এসব নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেই। আমি ছাড়াও অন্য যারা এসব ছাত্র সংগঠন, ছাত্রদের সংঘবদ্ধ চর্চার জন্য কাজ করেছেন তাদের সবাইকেই নানান সময়ে হুমকি, অত্যাচার, নিপীড়ন চালিয়ে এসেছে থেমে যাওয়ার জন্য। এবং আমি সেটা করিনি বলেই ১০/১৫ জন দলবেধে আমাকে আঘাত করেছে। ওরা আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে যাতে আমি ভয় পাই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারি, উঠে দাঁড়াতে না পারি, চিৎকার করতে না পারি সুন্দরের পক্ষে। ওদের হিশেব কিছুটা গণ্ডগোল ছিলো। আমাকে এভাবে থামিয়ে দেয়া সম্ভব না। কারণ একটা মরুভূমির দিকে তাকিয়ে সেখানে শিউলি ফুল ফুটানোর স্বপ্ন দেখেছি আমরা। ১০১ একরের সীমানা ছাড়িয়ে এক সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, একাত্তরের বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, তাজউদ্দীন আহমেদ, আলতাফ আহমেদ, মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান আর হুমায়ূন আজাদের বাংলাদেশ। এবং এসব কোন সাময়িক আয়োজন নয়, সাময়িক বিশ্বাস নয়। আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেললেই আমার সমস্ত বোধ, বিশ্বাস, স্বপ্ন, ভালোবাসা, আদর্শিক অবস্থান, চর্চা সেগুলো ধুয়ে মুছে যায় না। বরং সাহস আর শক্তি জোগায়, ভয়হীন করে তুলে। আমার পরিবার আমাকে যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দিয়ে বড় করে তুলেছেন, একজন সত্যনিষ্ঠ মানবিক মানুষ হয়ে উঠবার চেষ্টাটুকু – এগুলো সময়ের অশ্লীল আঘাতে মিইয়ে যাবার নয়। এসব আঘাত প্রত্যাশিত এবং এগুলোকে আমি ভয় পাই না, ভয় পাই নাই, ভয় পাই না এবং ভয় পাই না।
ঘটনার পেছনের এবং আরো পেছনের কিংবা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খানিক চিত্র আমি উপরে বলার চেষ্টা করেছি। এখন এই ঘটনার বিচার চাই কিনা এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নানান রকম। একরম উত্তর হচ্ছে ব্যক্তি রবিউল আউয়াল এই ঘটনার বিচার চায় না কিংবা আমি মনে করি না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ঘটনার বিচার করবার সামর্থ্য আছে। দিনের দিনের পর দিন অন্যায়, অবিচার, মাদক, শিক্ষার প্রতিকূল পরিবেশ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, অপরাজনীতি আর মূল্যবোধের এমন অবক্ষয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দণ্ডায়মান যে উনারা চাইলেও এই ঘটনার বিচার করা সম্ভব নয় এখন আর। আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র, যুক্তি দিয়ে হিশেব করার পর আমি মনে করিনা দুচারজন লোককে শাস্তি দিলেই আমি যেমনটা বিশ্ববিদ্যালয় চাই তা আগামীকাল থেকে হয়ে উঠবে। কোন শাস্তি, দণ্ড একদল পর্যায়ক্রমিক অসুস্থ, ভীষণ বিকারগ্রস্থ, মস্তিষ্কহীন পঙ্গপালকে থামিয়ে দিতে পারবে না। এইযে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এতোগুলো শিক্ষক; এদের মধ্য থেকে কেউতো চাকরির খোলসটা খুলে আমার জন্য রাস্তায় নেমে আসেনি ভালোবাসা নিয়ে। তাদের একজনেরও সত্যনিষ্ট প্রকাশ আমি প্রকাশ্য হতে দেখিনি। অন্যায়কারীদের স্রেফ শাস্তি নয় বরং সুস্থ করবার জন্য, পৃথিবীকে সুন্দরভাবে দেখবার জন্য, মানুষকে ভালোবাসবার আয়োজন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন, বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। বলে রাখি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছি কেন এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়ে আমাকে প্রথম আঘাত করা হয়। অথচ ঘটনার এতোগুলো দিন পরও বিশ্ববিদ্যালয় দোদুল্যমান অবস্থায় কাটাচ্ছে। পূর্বেও এমন অনেক অন্যায়, নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারেনি। তাই আমি ধরে নিয়েছি, এর বিচার হবেনা এবং আমার একার এগিয়ে যাওয়াটাই আমার পাওনা। অসুন্দরের পথে সুন্দরের চর্চাই হয়ত ওদেরকে মুগ্ধ করতে পারে; ওদের ভুলটুকু ভাঙ্গাতে পারে। বহিস্কার, জেলের গারদ কোনটিই তো হাজার হাজার অসুস্থ, মাদকাসক্ত, বিবেকহীন তরুণকে সুস্থ করে তুলবে না। ওদের প্রতি আমার কোন ঘৃণাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিও কোন অভিযোগ নেই। সারা বাংলাদেশের অসুস্থ চিত্র আমি দেখছি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর বাইরে নয়। আমিতো মাত্র একা একজন শিক্ষার্থী এখানে, কদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী যে দুঃসহ যন্ত্রণার দিন পার করেছে, তেজগাও কলেজের এইযে চোখের আলো ফিরে না পাওয়া শিক্ষার্থীটি – এসবের তো কোন বিচার নেই। শহরের দর্জি দোকানদার বিশ্বজিৎ দাসের হত্যার ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখেছি। বিশ্বজিতের সেইসব খুনিদেরও তো বিচার করা গেল না। বিচারের হিশেব চাইতে গেলে কাগজের পর কাগজ স্তুপ হবে প্রশ্নসমেত। কিন্তু বিচার তো হয়না। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে দিনদিন অসুস্থ, রুগ্ন, ক্লান্ত হয়ে উঠছে তার জন্য আমার বিবৃতির প্রয়োজন নেই বোধহয়। একটা দেশ দিনের পর দিন অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে, বিচারহীনতা, অশ্লীল ক্ষমতায়ন, মাদকের অবাধ বিপণন এগুলোর মধ্য দিয়ে বিচার চাইবার মতন বোকা লোক আমি নই। তবে বিচার কোন আশা নয়, দয়াও নয়। বিচার অধিকার। এ অধিকারের লড়াইয়ে আমি দণ্ডায়মান আছি।
আমি আসলে কিছুই চাই না কারো কাছে। আমি চাই যে মানুষগুলো আমার সাথে ছিলো, আমরা যারা স্বপ্ন দেখেছি তারা যেন হারিয়ে না যায়। শত অন্যায়, অবিচার, বাধাবিপত্তি, অপবাদ, আক্রমণের মুখেও ওরা যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। যত কিছুই হোক না কেন ওরা যেন অশ্লীল ক্ষমতায়নকে নিরাপদ মনে করে ওর মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে হারিয়ে না যায়। সংবিগ্ন আর দণ্ডিত হয়ে বেঁচে থাকাটাই হয়ত আমাদের আজন্ম প্রাপ্তি। এই ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি নিশ্চয়ই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহপাঠীরা বিচার চাইতে গিয়ে নানান হুমকির স্বীকার হয়ে ফিরে এসেছে। আমাদের কেউই এখন শঙ্কামুক্ত নই, ভয় তাড়া করে ফিরছে সকলকে। আমি যদি আর কখনো লিখতে না পারি, বলতে না পারি তাই এই দীর্ঘ লেখাটি অসুস্থ অবস্থায় লিখলাম। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে আমার শিক্ষাজীবন কতটুকু নিরাপদ হবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। ০৩ বছর ধরে আমার যে ভাবনাগুলো শিখড়ডালপালাপাতা গজিয়ে বড় হয়েছে শত নিরাপত্তাহীনতায়ও সেগুলো প্রকাশ করা জরুরি বলেই এই লেখাটি লেখা। এছাড়াও বাংলাদেশের একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের গল্পের একজন অগুরুত্বপূর্ণ কিন্তু নিয়মিত একজন অবজার্ভার আমি; আমার আজ নাহয় কাল লিখতেই হতো এসব। আমি ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে এসব নিয়ে কথা বলবো কিন্তু সময়ের টানাপোড়ন সেটি দ্রুত হয়ে গেলো। যাহোক নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খল মুক্ত হোক এই কামনা করি।