আমার ঠিক মনে পড়েনা আমাদের ঠিক কবে থেকে আমরা আমাদের হইতে থাকি। ২০১৪ সাল কি ১৫? নিশ্চয়ই আমাদের দেখা হইছে স্তবকের কোন আড্ডায়। এর কদিন পরই আমরা মশাল শুরু করি যতদূর মনে পড়ে। তখন আপনি দূর্দান্ত নন্দিত কবিতা পাঠিকা। আমি উঠতি ছাত্রসংগঠক হিশেবে প্রকাশ পাইতেছিলাম কেবল। তারপর মশালের আড্ডার বিকেলগুলোতে আপনি কবিতা পইড়া শোনাইতেন। আপনার থেইকা আমি প্রথম কোন কবিতা শুনি এখন মনে পড়ছেনা শিউরলি। আজাদের সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে কিংবা সামরিক আইন ভাঙার পাঁচ রকম পদ্ধতি – এ দুইটার যেকোন একটা হবে হয়ত। সেইসব আড্ডাগুলাতে গিটারিস্ট ও ড্রামার কল্যাণ দা ছিলেন, ছিলেন ক্যাম্পাসের সবচে ডাইনামিক সংগঠক ও ছাত্রনেতা কবি অনিক দাস আর কবি কামরুল হুদা রকি। আরো অনেকেই আসতো নিয়মিত অনিয়মিত। কল্যাণ দা’র স্বপ্নভূমি গান গাইতে দেখা যাইতো রাকিব ভাইকে (রাকিব শামসুল আরেফিন, ক্যাম্পাস ব্যান্ডদল বাঙাল এর ভোকাল ও লিরিচিস্ট)। কবি ইরু খায়রুল করিম তখন হাংরি কবিতা নিয়ে উৎপাত করতো কিংবা পলিগ্যামি এবং প্রেম নিয়া দীর্ঘ লেকচার দিয়া বেড়াইতো। কোন গ্যামিতেই আমি ঠিক অসুবিধা করতে না পাইরা অহেতুক চিল্লাপাল্লা করতাম এবং দুজন গলা উচায়া ঝগড়া কইরা বেড়াইতাম।
সেসব সময়ে বিপ্লব আর বিক্ষোভের কবিতায় বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ার পাণ্ডাদের বদহজম হইতে থাকে। সময় কখনোই আমাদের পক্ষে ছিলো না। তবুও কবিতা পাঠের জন্য লোকে আপনাকে সমীহ করতো বেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররা যারা পড়াশোনা করেন না তারাও আপনার কবিতা ভালোবাসতেন। আমি নিশ্চিত বোকাচোদাগুলির কেউ কেউ জীবনেও আবুল হাসানের নামটা পর্যন্ত শোনে নাই। তো সেইসব দিনে যখন আমরা বুকের ভিত্রে সবুজ হরিণ পালতাম সেইসব দিন বছর দুতিনেক ব্যবধানে ফুরায়া গেলো। আমরা টিকা গেলাম অথচ ডাইনোসরগোষ্ঠী হারায়া গেলো। কবিতা পাঠ টিকলো না – এই কথা তো সবারই জানা। আমাদের সময়গুলি ইদুরে খায়া ফেলছে, খেয়াল ছিল না হয়ত। আপনাদের সাথে ঘুইরা ঘুইরা আমার প্রেমিকাগুলানরেও যে ইঁদুর খায়া ফেলছে তার খেয়াল পর্যন্ত ছিলো না। ছোটবেলায় দাত পইড়া গেলে এমন গর্তের ভেতরইতো আমরা দাতগুলান লুকাইতাম, তাই না? গর্তগুলা নাই, বিকেলবেলা নাই, শহিদুল জহির নাই, ইদুরগুলানরে খুইজা পাইতেছি না। কি যে মুশিবত! এইযে এইসব দিন – কপালিকা দর্শন আর কবিতা পাঠ করেনা। কিংবা পাঠ করলেও আমাদের কেউ শুনতে পায় না। এমন হইতে পারে হুমায়ুন আজাদ সম্পাদিত শ্রেষ্ঠ কবিতার বইটি কোথাও খুইজা পাওন যাইতেছে না অথবা পদ্মপুকুর পাড়ে বিকেলই নামে না। এমন অনেককিছুই তো হইতেছে আজকাল। এবং শুনতে পাই কেউ কেউ বলে দুতিনবার চেষ্টার পরও শিউলিতলাটা টেকানো গেলো না এবং কবিরা ঠিক সুবিধা করতে না পাইরা সকলে দল বাইন্ধ্যা বিসিএস পরীক্ষায় বসতেছে। আরো শুনতে পাই কেউ কেউ বলে আমাদের কারুর কারুর বুকের ভেতর সবুজ মনোটোনাস দুঃখ। মনোটোনাস, সবুজ, পাতার মতন, একঘেয়ে, সবুজ, মনোটোনাস, পাতার মতন, সবুজ, দূর্বার মতন, দুঃখ।